আফরান নিশোর জীবনী

আফরান নিশো। পুরো নাম আহমেদ ফজলে রাব্বি। তিনি ১৯৮৮ সালের ৮ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার– ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের ভারই গ্রামে– জন্ম গ্রহন করেন। স্থানীয় ভাবে তাদের বাড়ি ভারই সেন বাড়ি নামে পরিচিত।

তার বাবা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ ভোলা মিঞা, টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সদস্য। তিনি ফুসফুসে ক্যানসারজনিত রোগে পহেলা অক্টোবর ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। নিশোর এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। ২০১১ সালের মে মাসে আফরন নিশো তৃষাকে বিবাহ করেন— এবং  প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে তাদের- নায়রওয়ান নামে এক পুত্র জন্মগ্রহণ করেন।

ছোট বেলা থেকে টাঙ্গাইল শহরে বেড়ে উঠেছেন তিনি। নিশো টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে— ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেন। পরে ঢাকা ধানমন্ডি বয়েজ হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন । ঢাকা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। এরপর ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে গ্যাজুয়েশন করেন।

বর্তমান সময়ে ছোটপর্দার সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ আফরান নিশো। নিশোর স্মার্ট এন্ড এট্রাকটিভ লুক, ইউনিক এবং দুর্দান্ত ভিন্নধর্মী অভিনয় দিয়ে—- খুব অল্প সময়ের মধ্যে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন— এবং কোটি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। একজন অভিনেতা যে এত অসাধারন এবং ন্যাচারাল অভিনয়—- করতে পারে যা নিশোর অভিনয় দেখলেই সকলে উপলদ্ধি হয়। তাই তো এদেশের তরুন প্রজন্ম তাকে নাটকের বস বা গুরু বলে সম্বোধন করেন ।–

২০০০ সাল থেকে নিশো প্রথমে বিভিন্ন বুটিক হাইসের– স্টিল ফটো মডেল হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

২০০৩ সালে অমিতাভ রেজার বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর যাত্রা। এরপরে আরো নানা নির্মাতার সাথে নানারকম কাজ করেন নিশো এবং একই বছর আফজাল হোসেনের প্রতিষ্ঠান টকিজে একদিন স্ক্রিন টেস্ট দেন—- এবং টেস্ট কমপ্লিট করে থাইল্যান্ডে গিয়ে ডাবল কোলা ব্র্যান্ডের— জিনি জিনজার ফ্লেভারের একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নেন তিনি। এরপরে গাজী শুভ্র, গোলাম হায়দার কিসলু, কিরন মেহেদী সহ খ্যাতনামা অনেক পরিচালকের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন ।

২০০৫ সালে বাংলাভিশনে প্রচারিত গাজী রাকায়েতের পরিচালনায়— ঘরছাড়া নাটকের মধ্যদিয়ে তার নাটকে অভিনয় জীবন শুরু হয়। প্রথম নাটক করেই সকলের নজর কাড়েন তিনি— এবং এরপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নিশোকে ।

নিজের অভিনয় নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন নিশো, আর স্বপ্ন হলো একদম বাস্তবিক সব ধরনের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে চান তিনি । কোন একটি চরিত্রে নয় বরং বহুমাত্রিক চরিত্রে কনটিনিউ অভিনয় করে যেতে চান তিনি । তিনি প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদিকে আইডল মানেন।

অভিনয়ের পোকা এই মানুষটাকে চলচিত্রে দেখা যায়নি এখনো, এর কারন নিশোর ইচ্ছা হলো…..এমন একটি ভিন্নধর্মী চরিত্র বা গল্প হবে যা সম্পূর্ন ন্যাচারাল বা ইউনিক হওয়া চাই, কোন কপি স্কিপ্ট নয়। এই একটি কারনেই এখন পর্যন্ত অনেক মুভির অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন নিশো । তবে আমরা আশাবাদী খুব শিঘ্রই আমরা তাকে ভিন্নধর্মী কোন চলচিত্রে অভিনয় করতে দেখতে পাবো ।

টিভি নাটক ″যোগ বিয়োগ″-এ অভিনয়ের জন্য ২০১৬ সালে এবং বুকের বাঁ পাশে নাটকের জন্য ২০১৮ সালে  মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার “সেরা অভিনেতা (টিভি)” পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৯ সালে  এই শহরে ভালোবাসা নেই নাটকে— আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।


নিশো অভিনিত উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হলো, অচেনা মানুষ, স্বপ্নগুলো ইচ্ছে মত, ইডিয়টস, টার্নওভার, ফুলমতি, শুধু তোর জন্য, তুমি না থাকলে, লোটাকম্বল, রেডরোস, বিয়ে পাগল, শেষচিঠি, আকাশের ঠিকানায়, ইঞ্জিন, ধুমকেতু, কংকাবতির চিঠি, প্রেম না দ্বিধা, আবারও দেবদাস, আকাশের ঠিকানায়, এক্স স্কয়ার, হাটবিট, নিখোজ ভালবাসা, সংসার, কমলা সুন্দরী, বাক, ডাইভোর্স, হাওয়াই শহরের গল্প, গুলবাহার, বুদোধয়, একটি অসমাপ্ত ভালবাসা, ঘুরে দাড়ানোর গল্প, প্রতীক্ষা, হেলফুল সাইফুল, হোমটিউটর, অগোচরে ভালবাসা, জীবন সংগী, কমলার বনবাস, অনুভবে, সহজ সরল ছেলেটা এবং বহুল জনপ্রিয় নাটক বুকের বা পাশে ইত্যাদি ।

Leave a comment